Tuesday, 5 July 2016

কাজলা দিদি



                     যতীন্দ্র মোহন বাগচী



বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?

সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আচঁল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?

বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।

ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!

বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?

আদর্শ ছেলে


                          কুসুম কুমারি দাশ



আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে

কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?

মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন

"মানুষ হইতে হবে" --- এই তার পণ,

বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান,

নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ ?

হাত, পা সবারই আছে মিছে কেন ভয়,

চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয় ?

সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়,

আসে যার চোখে জল মাথা ঘুরে যায় |

সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ ---

"মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন" |

কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার

সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,

হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান

তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ

মোদের গরব মোদের আশা

                           



                             অতুল প্রসাদ সেন



মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা।

(মাগো) তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালোবাসা।।

কি যাদু বাংলা গানে, গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে,

গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা।।

বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন্‌, হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন-

ঐ ফুলেরই মধুর রসে বাঁধলো সুখে মধুর বাসা।।

বাজিয়ে রবি তোমার বীণে, আনলো মালা জগৎ জিনে।

তোমার চরণ-তীর্থে (মাগো) আজি জগৎ করে যাওয়া-আসা।।

ঐ ভাষাতেই নিতাই গোরা, আনল দেশে ভক্তি-ধারা,

আছে কৈ এমন ভাষা এমন দুঃখ-শ্রান্তি-নাশা।।

ঐ ভাষাতেই প্রথম বোলে, ডাকনু মায়ে ‘মা, মা’ বলে;

ঐ ভাষাতেই বলবো হরি, সাঙ্গ হলে কাঁদা হাসা।।

স্বাধীনতার সুখ



                             রজনীকান্ত সেন



বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,

"কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই,

আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে

তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।"


বাবুই হাসিয়া কহে, "সন্দেহ কি তায়?

কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।

পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,

নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।" 

Saturday, 2 July 2016

উৎসর্গ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর---বলাকা
উইলি পিয়র্‌সন্‌ বন্ধুবরেষু
          আপনারে তুমি সহজে ভুলিয়া থাক,
      আমরা তোমারে ভুলিতে পারি না তাই।
          সবার পিছনে নিজের গোপনে রাখ,
      আমরা তোমারে প্রকাশ করিতে চাই।
          ছোটোরে কখনো ছোট নাহি কর মনে,
      আদর করিতে জান অনাদৃত জনে,
প্রীতি তব কিছু না চাহে নিজের জন্য,
      তোমারে আদরি আপনারে করি ধন্য।
                       স্নেহাসক্ত
                                   শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর