Friday, 29 September 2017

নদী স্বপ্ন

nodirsapno
চিত্র: নদীর স্বপ্ন
কোথায় চলেছো ? এদিকে এসো না!
দুটো কথা শোনো দিকি,
এই নাও-এই চকচকে, ছোটো,
নতুন রুপোর সিকি।
ছোকানুর কাছে দুটো আনি আছে,
তোমায় দিচ্ছি তাও,
আমাদের যদি তোমার সঙ্গে
নৌকায় তুলে নাও।
নৌকা তোমার ঘাটে বাঁধা আছে-
যাবে কি অনেক দূরে?
পায়ে পড়ি, মাঝি, সাথে নিয়ে চলো
মোরে আর ছোকানুরে।
আমারে চেনো না? আমি যে কানাই।
ছোকানু আমার বোন।
তোমার সঙ্গে বেড়াবো আমরা
মেঘনা, পদ্মা, শোণ।
শোনো, মা এখন ঘুমিয়ে আছেন
দিদি গেছে ইশকুলে,
এই ফাঁকে মোরে-আর ছোকানুরে-
নৌকোয় নাও তুলে।
কোনো ভয় নেই-বাবার বকুনি
তোমায় হবে না খেতে,
যত দোষ সব আমরা-না, আমি
একা নেবো মাথা পেতে।
অনেক রঙের পাল আছে, মাঝি?
বেগুনি, বাদামি, লাল?
হলদেও?-তবে সেটা দাও আজ,
বেগুনিটা দিয়ো কাল।
সবগুলো নদী দেখাবে কিন্তু!
আগে পদ্মায় চলো,
দুপুরের রোদে ঝলমলে জল
বয়ে যায় ছলোছলো।
শুয়ে-শুয়ে দেখি অবাক আকাশ,
আকাশ ম-স্ত বড়ো,
পৃথিবীর সব নীল রং বুঝি
সেখানে করেছে জড়ো।
ঝাঁকে ঝাঁকে বেঁকে ঐ দ্যাখো পাখি
উড়ে চলে যায় দূরে
উঁচু থেকে ওরা দেখতে কী পায়
মোরে আর ছোকানুরে?
ওটা কী? জেলের নৌকা? তাই তো!
জাল টেনে তোলা দায়,
(১০২)
রূপোলি নদীর রূপোলি ইলিশ-
ইশ, চোখে ঝলসায়!
ইলিশ কিনলে? -আঃ, বেশ, বেশ,
তুমি খুব ভালো, মাঝি।
উনুন ধরাও, ছোকানু দেখাক
রান্নার কারসাজি।
পইঠায় বসে ধোঁয়া-ওঠা ভাত,
টাটকা ইলিশ-ভাজা-
ছোকানু রে, তুই আকাশের রানী,
আমি পদ্মার রাজা।
খাওয়া হলো শেষ, আবার চলছি
দুলছে ছোট্ট নাও,
হালকা নরম হাওয়ায় তোমার
লাল পাল তুলে দাও।
দেখি বসে বসে আকাশের রং
কী আশ্চর্য নীল
ছোটো পাখি আরও ছোটো হয়ে যায়
আকাশের মুখে তিল।
সারাদিন গেলো, সূর্য লুকোলো
জলের তলার ঘরে
সোনা হয়ে জ্বলে পদ্মার জল
কালো হলো তার পরে।
সন্ধ্যার বুকে তারা ফুটে ওঠে-
এবার নামাও পাল,
গান ধরো, মাঝি; জলের শব্দ
ঝুপঝুপ দেবে তাল।
ছোকানুর চোখ ঘুমে ঢুলে আসে
আমি ঠিক জেগে আছি
গান গাওয়া হলে আমায় অনেক
গল্প বলবে, মাঝি?
শুনতে শুনতে আমি ঘুমোই
বিছানা বালিশ বিনা-
মাঝি, তুমি দেখো ছোকানুরে, ভাই,
ও বড়োই ভীতু কিনা।
আমার জন্যে কিচ্ছু ভেবো না
আমি তো বড়োই প্রায়
ঝড় এলে ডেকো আমারে-ছোকানু
যেন সুখে ঘুম যায়।
সব নাও, মাঝি, চকচকে সিকি
এই আনি দুটো, তাও।
লক্ষ্মী তো, মোরে-আর ছোকানুরে
নৌকায় তুলে নাও।

No comments:

Post a Comment