Friday, 24 April 2020

ময়নামতির চর


এ-পারের এই বুনো ঝাউ আর ও পারের বুড়ো বট
মাঝখানে তার আগাছায় ভরা শুকনো গাঙের তট ;
এরি উঁচু পারে নিত্য বিহানে লাঙল দিয়েছে চাষী,
কুমীরেরা সেথা পোহাইছে রোদ শুয়ে শুয়ে পাশাপাশি |
কূলে কূলে চলে খরমূলা মাছ, দাঁড়িকানা পালে পালে
ছোঁ দিয়ে তার একটারে ধরি’ গাঙ চিল বসে ডালে
ঠোঁটে চেপে ধরি’ আছাড়ি আছাড়ি নিস্তেজ করি তায়
মুড়ো পেটি লেজ ছিঁড়ি একে একে গিলিয়া গিলিয়া খায় |
এরি কিছু দূরে একপাল গোরু বিচরিছে হেথা সেথা
শিঙে মাটি মাখা দড়ি ছিঁড়ি ষাঁড় চলে সে স্বাধীনচেতা |
মাথা নিচু করি কেহ বা ঝিমায় কেহ বা খেতেছে ঘাস,
শুয়ে শুয়ে কেহ জাবর কাটিয়া ছাড়িতেছে নিঃশ্বাস ;
গোচর পাখিরা ইহাদের গায়ে নির্ভয়ে চলে ফেরে
উকুন আঠালু ঠোকরিয়া খায় লেজের পালক নেড়ে ;
বক পাখিগুলো গোচরকীয়ার হয়েছে অংশীদার
শালিক কেবলই করিছে ঝগড়া কাজ কিছু নাই তার |

নতুন চরের পলি জমিটাতে কলাই বুনেছে যারা
আখের খামারে দিতেছে তারাই রাতভর পাহারা ;
খেতে কোণায় বাঁশ পুঁতে পুঁতে শূণ্যে বেঁধেছে ঘর
বিচালী বিছায়ে রচেছে শয্যা বাঁশের বাখারি ‘পর |
এমন শীতেও মাঝ মাঠে তারা থড়ের মশাল জ্বালি
ঠকঠকি নেড়ে করিছে শব্দ হাতে বাজাইছে তালি |
ওপার হইতে পদ্মা সাঁতারি বন্য বরাহ পাল
এ-পারে আসিয়া আখ খায় রোজ ভেঙে করে পয়মাল |
তাই বেচারিরা দারুণ শীতেও এসেছে নতুন চরে
টোঙে বসি বসি জাগিতেছে রাত পাহারা দেবার তরে ;
কুয়াশা যেন কে বুলায়ে দিয়েছে মশারির মত করি
মাঠের ওপারে ডাকিতেছে “ফেউ” কাঁপাইয়া বিভাবরী |
ঘুমেল শিশুরা এই ডাক শুনি জড়ায়ে ধরিছে মায়,
কৃষাণ যুবতী ঝাপটি তাহারে মনে মনে ভয় পায় ;
“ফেউ” নাকি চলে বাঘের পেছনে গাঁয়ের লোকেরা বলে
টোঙের মানুষ ভাবিতেছে ঘর, ঘর ভেজে আঁখি জলে |
এই চরে ওই হালটার কোণে বিঘে দুই ক্ষেত ভরি
বট ও পাকুড়ে দোঁহে ঘিরে ঘিরে করি আছে জড়াজড়ি |
গাঁয়ের লোকেরা নতুন কাপড় তেল ও সিঁদুর দিয়া
ঢাক ঢোল পিটি গাছ দুইটির দিয়ে গেছে নাকি বায়া |
নতুন চালুনি ভেঙে গেছে তার, মুছি আর কড়িগুলা
রাখাল ছেলেরা নিয়ে গেছে সব ভরি গামছায় ঝুলা |
চড়কের মেলা এই গাছতলে হয় বছরের শেষে
সে দিন যেন গো সারা চরখানি উত্সবে ওঠে হেসে |
বটের পাতায় নৌকা গড়িয়া ছেড়ে দেয় জলে কেউ,
এই চর হতে ওই গাঁ’র পানে নিয়ে যায় তারে ঢেউ |
ছোট ছেলেপুলে বাঁশি কিনে কিনে বেদম বাজায়ে চলে,
বুড়োদের হাতে ঠোঙায় খাবার, কাশে আর কথা বলে |
ছেঁড়া কলাপাতা টুকড়ো বাতাসা চারিদিকে পড়ে রয়
পরদিনে তার রাখাল ছেলেরা সবে মিলে ঘুঁটে লয় ;
উত্সব শেষে খাঁ খাঁ করে হায় শূণ্য বালির চর—
এ পারের পানে চাহিয়া ও পার কাঁদে শুধু রাত ভর |


বৃষ্টির ছড়া

ফর্‌রুখ আহমদ

বৃষ্টি এল কাশ বনে
জাগল সাড়া ঘাস বনে,
বকের সারি কোথা রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে।

নদীতে নাই খেয়া যে,
ডাকল দূরে দেয়া যে,
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটল আবার কেয়া যে।

গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,
বিষ্‌টি বাদল দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে মেঘ দেখে,
যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা।

মেঘের আঁধার মন টানে,
যায় সে ছুটে কোন খানে,
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের দেশ পানে।

Tuesday, 14 April 2020

পাখি সব করে রব


মদনমোহন তর্কালঙ্কার


পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।।
শীতল বাতাস বয় জুড়ায় শরীর।
পাতায়-পাতায় পড়ে নিশির শিশির।।
ফুটিল মালতী ফুল সৌরভ ছুটিল।
পরিমল লোভে অলি আসিয়া জুটিল ॥

গগনে উঠিল রবি সোনার বরণ।
আলোক পাইয়া লোক পুলকিত মন ॥
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে ॥
উঠ শিশু মুখ ধোও পর নিজ বেশ।
আপন পাঠেতে মন করহ নিবেশ ॥

Friday, 10 April 2020

একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর আমার


একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর
রে মন আমার
কেন বান্ধ দালান ঘর?

প্রাণপাখি উড়ে যাবে পিঞ্জর ছেড়ে
ধরাধামে সবই রবে, তুমি যাবে চলে
বন্ধু বান্ধব যতো, মাতা-পিতা, দারা-সুতো
সকলই হবে তোমার পর।।
মন আমার ...
কেন বান্ধ দালান ঘর?

দেহ তোমার চর্মচর গলে পচে যাবে
শিরা উপশিরাগুলো ছিন্নভিন্ন হবে
মুণ্ডু মেরুদন্ড, সবই হবে খন্ড খন্ড
পড়ে রবে মাটিরও উপর।।
মন আমার ...
কেন বান্ধ দালান ঘর?

নাই বিছানা নাই রে পানি ভেতরে ঘোর অন্ধকার
তার ভিতরে পড়ে রবি ওরে মুনীর সরকার
কিসের ইষ্টি পুত্র? কিসের ইষ্ট মিত্র?
দম ফুরাইলে সবই হবে পর।।
মন আমার ...
কেন বান্ধ দালান ঘর?
  • কথা ও সুর: বাউল মুনীর সরকার