Sunday, 18 July 2021

কুরবানী নিয়ে গজল

 Gazol about Qurbani

Eid ul Adha

The prophet ibrahim (pbuh) sacrificed his beloved son 


Poet:


Muhammad Helal Uddin

° Cumilla, Bangladesh

° Writes poetry, essay, song 

       in both Bangla & English

° 1984- present


ছবি: কুরানীর পশু


ইবরাহিম নবী দিলেন ত্যাগী তাঁরই প্রিয় ছেলে খানী।

আজো বাজে তাকিয়ে দেখ রে ঐ দিনেরই সুর বাণী।

রবকে খুশি করার জন্য দাও গো তুমি কুরবানী

রক্ত মাংস কিছুই নহে, তিনি দেখেন শুধু তোমার অন্তরখানী।


ইসমাইল নবী শিখালেন মোদের সকল ত্যাগের মহিমা

ধরার বুকে আজো বাজে সে সুরেরই দামামা।

ঐ মহিমার ধ্বজা ধরে কুরবান কর সকল প্রাণী।


প্রভুর প্রেমে কেমন করে বিলিয়ে দিতে হয়

ভালবেসে তাঁরই আদেশ পালন করতে হয়।

আল্লাহর জন্য করব সবই কুরবানীরই মূলবাণী।


কুরবানী নিয়ে গজল: 

ইব্রাহিম নবী দিলেন ত্যাগী তাঁরই প্রিয় ছেলেখানি




Saturday, 1 May 2021

মুনিয়া হত্যার বিচার ও শিল্পপতির দায়


কবিতা: মুনিয়া হত্যার বিচার ও শিল্পপতির দায়

কবি: ডা. মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন

Poetry: Justice of Munia killing & the responsibility of the industrialist

Poet: Muhammad Helal Uddin


মুনিয়া হত্যার বিচার ও শিল্পপতির দায়


এত বড় হত্যাকাণ্ড,

তবু তোমাকে আমি দেখতে পাই না পত্রিকায়।

 এর সঙ্গে তোমার গোপন সম্পর্কের বিষয়টা আমাকে বলবে? আমি কাউকে বলব না।


পেপার বা টিভির মালিক তো তুমিই। 

দেশের শীর্ষস্হানীয় শিল্পগ্রুপ তোমার।

তাই সাংবাদিকের কলমে কালি নেই, কারো মুখে কথা নেই। টিভিতে অপরাধের প্রচার নেই।


অথচ সভ্য দুনিয়ায় আমি দেখেছি, অপরাধী যত বড়ই হোক তার নামে নিউজ হয়;

তার নামে অনুসন্ধানী রিপোর্ট হয়। 

অনেকেই 'সাহসী সাংবাদিক' হওয়ার ভাব দেখায় । 

অথচ তোমার অপরাধে দুই কলম লেখার সাহস হয় না তাদের। 


দেশের আইন হয়তো তোমাদের কিছুই করতে পারবে না? কারণ, তোমরাই সরকার, তোমরাই আইন।

তোমাদের যেন জন্মই হয়েছে আইনের উর্ধ্বে। এটা কেমন কথা। 

তুমি বুক ফুলিয়ে হাঁট। 

গর্বে তোমার  পা পড়ে না মাটিতে।


কিন্তু মনে রেখ, কতদিন তুমি তোমার কৃত অপরাধের বিচার ঠেকিয়ে রাখবে। 

পৃথিবীর সব কিছু তোমার মন মত চলবে না।

একদিন হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

 আর তখন তুমিও ধরা পড়ে যাবে।


ইউটিউব লিঙ্ক:

মুনিয়া হত্যার বিচার ও শিল্পপতির দায়



Friday, 5 March 2021

এসো বই পড়ি




এসো বই পড়ি -- বাংলা কবিতা
এসো বই পড়ি। বই থেকে আলো নিই।
সেই আলোতে জীবন গড়ি।
কারণ, আলো ও অন্ধকার সমান কি হয়?
দিবা ও রাতি সমান কি হয়?
ও ভাই তুমি তো জান, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান তো নয়।
এসো, বই পড়ি। এসে পড় এখনি, জ্ঞান চর্চা করি।
জ্ঞান সাগরে মুক্তা খুঁজি। জ্ঞানের সঙ্গে প্রেম করি।
মূর্খ কেন থাকবে? ও ভাই, মূর্খ কেন থাকবে?
তুমি তো জান, মূর্খের ইবাদত অপেক্ষা জ্ঞানীর ঘুম উত্তম।
জেগে উঠ এখনি। জ্ঞান সাধনায় ব্রত হও।
এগিয়ে চল প্রযুক্তি জ্ঞানে, আরো বেশি ব্রত হও বিজ্ঞান গবেষণায়।৷

Comments

Comments

Friday, 28 August 2020

দাদা বাড়ি


 আব্বু- আম্মু এবার চল দাদা বাড়ির পানে

দোয়েল - শালিক ডাকে মোদের মিষ্টি মধুর গানে।
দাদা বাড়ির গাছে ঝুলে মিষ্টি মজার আম
এসব খেতে দাদাভাই ডাকে মোদের নাম।
শহর জীবন বন্দীখানা চল গাঁয়ের টানে।
পুকুর জলে দেখব মোরা কত মাছের খেলা
বন্যা এলে জলাশয়ে চড়ব কলার ভেলা।
গাছ থেকে পেয়ারা পেড়ে খাব গো সুঘ্রাণে।

Co

Wednesday, 1 July 2020

খোকা যায় স্কুলে

খোকা যায় স্কুলে
কত সুন্দর সাজে
চিপ নিয়ে কাঁড়াকাড়িঁ
সহপাঠীর মাঝে।

জোরে জোরে ছড়া বলে
গলা ফাটিয়ে
মাঝে মাঝে খেলা করে
মন মাতিয়ে।

খোকা হাসে খুকি হাসে
পাগল পারা দাঁতে
ছুটি শেষে বাড়ি ফিরে
আম্মুর সাথে।

Tuesday, 30 June 2020

করোনার গান


কোন কারণে মন হাসে
 না
 করোনা গেল কই?
চতুর্দিকে শোক সংবাদ
কোথা মোর সই?


সারা ভুবন কাঁদে শুধু
খুকু হাসে না।
কোন খবরে ঘুম আসে না?
রাত জেগে রই।






Sunday, 3 May 2020

একতার গান


মিলেমিশে এক হয়ে যাই সকল মুমিন ভাই
দলে দলে ভাগ হতে মোরা নাহি চাই
পরিচয়ে শুধুই মুসলিম, আর কিছু নাই।
আল কুরআনের মহব্বতে এই হিম্মত পাই।


 বিশ্ব নবীর সুন্নাহ মানি ওরে মুমিন সবাই মিলে
একই কাবায় তাওয়াফ করি সকল হাজী দলে দলে।
একই কুরআন ফলো করি সকল মুমিন মুসলমান
একই আল্লাহর নামায পড়ি যিনি মেহেরবান।

মোর নবীজির রেখে যাওয়া এক উম্মার বিভক্তি নাই।
 ঐ

সবাই মিলে ঈদ করি বিশ্ব মুমিন মুসলমান
একই নিয়ম ফলো করে  জানাযাতে যাই  বিসমিল্লাহতে  শুরু করি শেষ নবীজির  উম্মত তাই। 
 (মোরা) একই দেহের বিভিন্ন প্রাণ,  আর কিছু নাই।

  ঐ

 মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন রচিত এই গানটির 
প্রথম শিল্পী এইচ. এম. আলাউদ্দিন

Milemishe ek hoye zai sokol mumin bhai
Lyric & Tune: Muhammad Helal Uddin
Singer: H. M. Alauddin




Friday, 24 April 2020

ময়নামতির চর


এ-পারের এই বুনো ঝাউ আর ও পারের বুড়ো বট
মাঝখানে তার আগাছায় ভরা শুকনো গাঙের তট ;
এরি উঁচু পারে নিত্য বিহানে লাঙল দিয়েছে চাষী,
কুমীরেরা সেথা পোহাইছে রোদ শুয়ে শুয়ে পাশাপাশি |
কূলে কূলে চলে খরমূলা মাছ, দাঁড়িকানা পালে পালে
ছোঁ দিয়ে তার একটারে ধরি’ গাঙ চিল বসে ডালে
ঠোঁটে চেপে ধরি’ আছাড়ি আছাড়ি নিস্তেজ করি তায়
মুড়ো পেটি লেজ ছিঁড়ি একে একে গিলিয়া গিলিয়া খায় |
এরি কিছু দূরে একপাল গোরু বিচরিছে হেথা সেথা
শিঙে মাটি মাখা দড়ি ছিঁড়ি ষাঁড় চলে সে স্বাধীনচেতা |
মাথা নিচু করি কেহ বা ঝিমায় কেহ বা খেতেছে ঘাস,
শুয়ে শুয়ে কেহ জাবর কাটিয়া ছাড়িতেছে নিঃশ্বাস ;
গোচর পাখিরা ইহাদের গায়ে নির্ভয়ে চলে ফেরে
উকুন আঠালু ঠোকরিয়া খায় লেজের পালক নেড়ে ;
বক পাখিগুলো গোচরকীয়ার হয়েছে অংশীদার
শালিক কেবলই করিছে ঝগড়া কাজ কিছু নাই তার |

নতুন চরের পলি জমিটাতে কলাই বুনেছে যারা
আখের খামারে দিতেছে তারাই রাতভর পাহারা ;
খেতে কোণায় বাঁশ পুঁতে পুঁতে শূণ্যে বেঁধেছে ঘর
বিচালী বিছায়ে রচেছে শয্যা বাঁশের বাখারি ‘পর |
এমন শীতেও মাঝ মাঠে তারা থড়ের মশাল জ্বালি
ঠকঠকি নেড়ে করিছে শব্দ হাতে বাজাইছে তালি |
ওপার হইতে পদ্মা সাঁতারি বন্য বরাহ পাল
এ-পারে আসিয়া আখ খায় রোজ ভেঙে করে পয়মাল |
তাই বেচারিরা দারুণ শীতেও এসেছে নতুন চরে
টোঙে বসি বসি জাগিতেছে রাত পাহারা দেবার তরে ;
কুয়াশা যেন কে বুলায়ে দিয়েছে মশারির মত করি
মাঠের ওপারে ডাকিতেছে “ফেউ” কাঁপাইয়া বিভাবরী |
ঘুমেল শিশুরা এই ডাক শুনি জড়ায়ে ধরিছে মায়,
কৃষাণ যুবতী ঝাপটি তাহারে মনে মনে ভয় পায় ;
“ফেউ” নাকি চলে বাঘের পেছনে গাঁয়ের লোকেরা বলে
টোঙের মানুষ ভাবিতেছে ঘর, ঘর ভেজে আঁখি জলে |
এই চরে ওই হালটার কোণে বিঘে দুই ক্ষেত ভরি
বট ও পাকুড়ে দোঁহে ঘিরে ঘিরে করি আছে জড়াজড়ি |
গাঁয়ের লোকেরা নতুন কাপড় তেল ও সিঁদুর দিয়া
ঢাক ঢোল পিটি গাছ দুইটির দিয়ে গেছে নাকি বায়া |
নতুন চালুনি ভেঙে গেছে তার, মুছি আর কড়িগুলা
রাখাল ছেলেরা নিয়ে গেছে সব ভরি গামছায় ঝুলা |
চড়কের মেলা এই গাছতলে হয় বছরের শেষে
সে দিন যেন গো সারা চরখানি উত্সবে ওঠে হেসে |
বটের পাতায় নৌকা গড়িয়া ছেড়ে দেয় জলে কেউ,
এই চর হতে ওই গাঁ’র পানে নিয়ে যায় তারে ঢেউ |
ছোট ছেলেপুলে বাঁশি কিনে কিনে বেদম বাজায়ে চলে,
বুড়োদের হাতে ঠোঙায় খাবার, কাশে আর কথা বলে |
ছেঁড়া কলাপাতা টুকড়ো বাতাসা চারিদিকে পড়ে রয়
পরদিনে তার রাখাল ছেলেরা সবে মিলে ঘুঁটে লয় ;
উত্সব শেষে খাঁ খাঁ করে হায় শূণ্য বালির চর—
এ পারের পানে চাহিয়া ও পার কাঁদে শুধু রাত ভর |


বৃষ্টির ছড়া

ফর্‌রুখ আহমদ

বৃষ্টি এল কাশ বনে
জাগল সাড়া ঘাস বনে,
বকের সারি কোথা রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে।

নদীতে নাই খেয়া যে,
ডাকল দূরে দেয়া যে,
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটল আবার কেয়া যে।

গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,
বিষ্‌টি বাদল দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে মেঘ দেখে,
যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা।

মেঘের আঁধার মন টানে,
যায় সে ছুটে কোন খানে,
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের দেশ পানে।

Tuesday, 14 April 2020

পাখি সব করে রব


মদনমোহন তর্কালঙ্কার


পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।।
শীতল বাতাস বয় জুড়ায় শরীর।
পাতায়-পাতায় পড়ে নিশির শিশির।।
ফুটিল মালতী ফুল সৌরভ ছুটিল।
পরিমল লোভে অলি আসিয়া জুটিল ॥

গগনে উঠিল রবি সোনার বরণ।
আলোক পাইয়া লোক পুলকিত মন ॥
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে ॥
উঠ শিশু মুখ ধোও পর নিজ বেশ।
আপন পাঠেতে মন করহ নিবেশ ॥

Friday, 10 April 2020

একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর আমার


একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর
রে মন আমার
কেন বান্ধ দালান ঘর?

প্রাণপাখি উড়ে যাবে পিঞ্জর ছেড়ে
ধরাধামে সবই রবে, তুমি যাবে চলে
বন্ধু বান্ধব যতো, মাতা-পিতা, দারা-সুতো
সকলই হবে তোমার পর।।
মন আমার ...
কেন বান্ধ দালান ঘর?

দেহ তোমার চর্মচর গলে পচে যাবে
শিরা উপশিরাগুলো ছিন্নভিন্ন হবে
মুণ্ডু মেরুদন্ড, সবই হবে খন্ড খন্ড
পড়ে রবে মাটিরও উপর।।
মন আমার ...
কেন বান্ধ দালান ঘর?

নাই বিছানা নাই রে পানি ভেতরে ঘোর অন্ধকার
তার ভিতরে পড়ে রবি ওরে মুনীর সরকার
কিসের ইষ্টি পুত্র? কিসের ইষ্ট মিত্র?
দম ফুরাইলে সবই হবে পর।।
মন আমার ...
কেন বান্ধ দালান ঘর?
  • কথা ও সুর: বাউল মুনীর সরকার


Tuesday, 24 March 2020

মেঘনায় ঢল


হুমায়ুন কবির

শোন মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করে মাঠে চল,

এল মেঘনার জোয়ারের বেলা
এখনি নামিবে ঢল।
নদীর কিনার ঘন ঘাসে ভরা
মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা
করিস না দেরি- আসিয়া পড়িবে সহসা অথই জল
মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা মেঘনায় নামে ঢল।

এখনো যে মেয়ে আসে নাই ফিরে- দুপুর যে বয়ে যায়।
ভরা জোয়ারের মেঘনার জল কূলে কূলে উছলায়।
নদীর কিনারা জলে একাকার,
যেদিকে তাকাই অথই পাথার
দেখতো গোহালে গরুগুলো রেখে গিয়েছে কি ও পাড়ায়?
এখনো ফিরিয়া আসে নাই সে কি? দুপুর যে বয়ে যায়।

Monday, 23 March 2020

খেয়াল খুশি

সূর্য নিজে
গগণ হতে
খেয়াল খুশি আলো ছিটায়
পূর্ণ তেজে।

পাখি নিজে
বাসা হতে
খেয়াল খুশি ছড়িয়ে পড়ে
খাবার খোঁজে।

ফাগুন এলে
সাড়া ফেলে
খেয়াল খুশি ফুল ফুটিয়ে
প্রকৃতি সাজে।

কী জলে
কী স্হলে
চারিদিকে কান পাতিয়ে শুনতে পাবে
  

Friday, 20 March 2020

আজিকার শিশু




আজিকার শিশু
সুফিয়া কামাল

আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।
উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা
আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন ,পরী, দেও, দানা।
পাতালপুরীর অজানা কাহিনী তোমরা শোনাও সবে
মেরুতে মেরুতে জানা পরিচয় কেমন করিয়া হবে।
তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভূ নাহি হবে আর
আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।
শস্য-শ্যামলা এই মাটি মা'র অঙ্গ পুষ্ট করে
আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।
তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-
সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি
তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর
জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর।

Wednesday, 11 March 2020

মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এর বিখ্যাত কবিতাবলী

আমাদের ঘর



বাংলাদেশের একটি স্হানে একটি ছোট ঘর
শুনতে পাই সেথায় নিতি আব্বু, আম্মুর স্বর।
দুই ভাই, দুই বোন মজা করি রোজ
সদা মোরা একত্রে খেতে বসি ভোজ।
আম্মুর রান্না করা কত মজার ভোজ
তৃপ্তি নিয়ে খাই মোরা ভাইয়ে, বোনে রোজ।

সন্ধ্যা হলে বসে পড়ি পড়ার টেবিলে
আম্মু নিজে পড়িয়ে দেন কোথাও আটকে গেলে।
বাহির থেকে আব্বু আসেন সাথে নিয়ে মজা
সবাই মিলে খেয়ে ফেলি থাকতে থাকতে তাজা।
ভাই - বোন পরস্পরকে কত ভালবাসি
আনন্দে আছি মোরা চোখে - মুখে হাসি।

আমাদের বন


রোদ দুপুরে বনের ভিতর

গুল্ম লতার মাঝে

জবা - বেলীর নৃত্য চলে

অপরুপ সাজে ।

ফড়িং নাচে আপন মনে

ডুমুর গাছের তলে

কৃষ্ণচূড়ার রঙ্গিন ফুলে

দোলা লাগে মনে ।

স্নিগ্ধ পবন বয়ে যায় বনভূমি জুড়ে

হরিণ পাল খাদ্য খুঁজে হেথায় - হোথায় চষে ।

কাক ডাকে কোকিল ডাকে পালক নেড়ে নেচে

এই খানেতে থাকতে চাই চিরকাল বেঁচে ।

আমাদের ছোট গাঁয়ের ছোট সেই বন

বায়ু দেয় ফল দেয় সারা জীবন ক্ষণ ।

আমাদের বনখানি হাজার বছর ধরে

কত স্মৃতি বয়ে বেড়ায় আঁচল ভরে ভরে ।

বাপ - চাচা পূর্ব পুরুষ সারা জীবন ভর

এই বনেতে খুঁজে পেতেন আপন শীতল ঘর ।

যে কালে ময়না পালে

বুলি শিখে কথা বলে

কিশোর বাবুর খুশি মেলে

যে কালে ময়না পালে

পাড়া গাঁয়ে সাড়া ফেলে।

বাম হাতে ঘুড়ি নিয়ে

ডান হাতে খাঁচা ধরে

কিশোর বাবু কথা বলে

ছুটে যায় দিঘীর পাড়ে।

খানিক পরে ঘুড়ি উড়ে

গগণ পানে ছো ছো করে

যায় ছুটে যায় রশি ছুটে

কিশোর বাবু খাঁচা ফেলে

দৌড়ে যায় নদীর ঘাটে।

প্রিয় সাথী সোহাগ এসে

খাঁচা দেখে হেসে ফেলে

খুশির ছটে ময়না নিয়ে

সোহাগ করে বুলি বলে ।

সারা বিকাল কেঁদে - কেঁদে

কিশোর বাবু অর্ধ - মরা

বাবা - মায়ের বকা খেয়ে

মনের জ্বালায় সুখে খরা।

সন্ধ্যা হলে সোহাগ আসে

দুই হাতে খাঁচা নিয়ে,

ফিরিয়ে দেয় বুলি পাখি

প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় দিয়ে।

যে কালে ময়না পালে

ভুলে কি কেউ কস্মিন কালে?

বারংবার চায় ফিরে যেতে

অপূর্ব স্বাদে পঞ্জিকা সাল

শিশু পার্কে যাই


ভাইরে ভাইরে ভাই,
শিশু পার্কে যাই।
দলে দলে দোলনা চড়ে
কত মজা পাই!
খেলনা দিয়ে খেলার মাঝে
হঠাৎ ফুটে নাই।
মনে প্রাণে চাই
ওটা ফিরে পাই।

কাড়ি কাড়ি বেলুন দেখি
সারা পার্ক জুড়ে,
লাল বেলুন নীল বেলুন
রংধনুর সাজে-
ওড়ে যায় আকাশ পানে
সারি সারি ভাঁজে।

আমিও চাই ওড়ে যাই
বেলুনের সাথে,
ধরে ফেলি রংধনু
উল্লাসে মেতে।


বাংলাদেশ
স্বাধীন বাংলাদেশ !

ধরণীর বুকে আকাঙ্ক্ষার ভূমি মোদের,

মোদের চিরায়ত মঞ্জিল ।

ফুল - ফল ও ফসলে রহে আবাদ

জিন্দেগী মোদের শান্তির আস্বাদ,

হিন্দু - মুসলিম সাম্যের মৈত্রী - প্রীতির বন্ধনে

দিকে দিকে হেথা ধ্বনিছে মানবতার কল্যাণ,

মজলুমের স্মৃতির একাত্তরে অম্লান

যারা তলাবিহীন ঝুড়ি,যারা অন্ন হারা

এই মঞ্জিলে আজ খুঁজে পাচ্ছে তারা

--- জীবনের সঞ্চয় অফুরান ।।

অধিকার বিহীন ছিল যারা সীমাহীন,

এ মাটি আজ তাদের স্বপ্ন ফলনে রঙ্গিন।

অবনীর বুকে স্বীকৃত মডেল মোরা আজ,

জীবনের নানা সূচকের লক্ষ্য পূরণের অধিকারে ।

পার্বত্য শৈল কেওকারাডং শীর্ষ,

চিরায়ত জননী মোদের জন্মভূমি,

দুনিয়ার জান্নাত সগৈরবে বুলন্দ।।

নয়ন জুড়ানো সমুদ্র সৌকত

অঙ্গ ধৌত গৌরব শানিত,

পদ্মা - যমুনা -ডাকাতিয়া বাহিত -

স্নিগ্ধ অমৃত ধারা ।

দেশের তরে সারাটি জীবন ভরে

মোরা জাগ্রত কর্মী, মোরা স্বপ্ন পূরণে দৃপ্ত ।

জোনাক জ্বলে উঠে

চাঁদনী রাতে ঘরের পিছে

গুল্ম - লতার মাঝে

মিট - মিট -মিট আলো ছড়ায়

দৃষ্টিনন্দন সাজে ।

কুমড়ো ফুলে দোয়েল পাখি

ডাকছে খোকায় শেষে,

ঝাঁকে ঝাঁকে সারি সারি

জোনাক জ্বলে উঠে ।

এমনি সময় খোকা বাবু

ঘরের বাইরে এসে

একটি জোনাক ধরে ফেলে

দু' ঠোঁট মিলে হাসে।
বিবেক দিয়েছ তুমি প্রত্যেকের করে

ইচ্ছার স্বাধীনতা অর্পণ করেছ

হে রাজাধিরাজ, প্রত্যেকের পরে ।

উদারতা যেথা ক্ষীণ দূর্বলতা

মনন বিকাশ চাই সেথাই সেথা ।

কল্যাণ করিবার ব্রত রসনায় মম

জ্বলি উঠি যেন তোমার ইঙ্গিতে ।

অন্যের ক্ষতি দেখিলে যেন

গর্জে উঠি  পরতে পরতে ।

পেশি শক্তি যেন নাহি ডরি

Sunday, 23 February 2020

আমাদের ঘর


        
শুনতে পাই সেথায় নিতি আব্বু, আম্মুর স্বর।
দুই ভাই, দুই বোন মজা করি রোজ
সদা মোরা একত্রে খেতে বসি ভোজ।
আম্মুর রান্না করা কত মজার ভোজ
তৃপ্তি নিয়ে খাই মোরা ভাইয়ে, বোনে রোজ।

সন্ধ্যা হলে বসে পড়ি পড়ার টেবিলে
আম্মু নিজে পড়িয়ে দেন কোথাও আটকে গেলে।
বাহির থেকে আব্বু আসেন সাথে নিয়ে মজা
সবাই মিলে খেয়ে ফেলি থাকতে থাকতে তাজা।
ভাই - বোন পরস্পরকে কত ভালবাসি
কত সুখে আছি মোরা চোখে - মুখে হাসি।


ছড়াটির ইউটিউব লিঙ্ক:
https://youtu.be/XNmNmqOKaJ8



Wednesday, 13 November 2019

আমাদের বন

 'বিশ্বময় বাংলাভাষা' কাব্যগ্রন্হ থেকে উদ্ধৃত

রোদ দুপুরে বনের ভিতর

গুল্ম লতার মাঝে

জবা - বেলীর নৃত্য চলে

অপরুপ সাজে ।

ফড়িং নাচে আপন মনে

ডুমুর গাছের তলে

কৃষ্ণচূড়ার রঙ্গিন ফুলে

দোলা লাগে মনে ।

স্নিগ্ধ পবন বয়ে যায় বনভূমি জুড়ে

হরিণ পাল খাদ্য খুঁজে হেথায় - হোথায় চষে ।

কাক ডাকে কোকিল ডাকে পালক নেড়ে নেচে

এই খানেতে থাকতে চাই চিরকাল বেঁচে ।

আমাদের ছোট গাঁয়ের ছোট সেই বন

বায়ু দেয় ফল দেয় সারা জীবন ক্ষণ ।

আমাদের বনখানি হাজার বছর ধরে

কত স্মৃতি বয়ে বেড়ায় আঁচল ভরে ভরে ।

বাপ - চাচা পূর্ব পুরুষ সারা জীবন ভর

এই বনেতে খুঁজে পেতেন আপন শীতল ঘর ।


আমাদের বন ছড়াটির ইউটিউব লিঙ্ক:



Sunday, 10 November 2019

ট্রেন

ট্রেন
           শামসুর রাহমান

ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
          রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে

         ট্রেনের বাড়ি কই ?

একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়
         মাঠ পেরুলেই বন।
পুলের ওপর বাজনা বাজে
         ঝন ঝনাঝন ঝন।

দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে
         নেইকো ঘোরার শেষ।
ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি,
         দিন কেটে যায় বেশ।

থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি
        একটু কেশে খক।
আমায় নিয়ে ছুটবে আবার
        ঝক ঝকাঝক ঝক।

Saturday, 5 October 2019

যে কালে ময়না পালে


"বিশ্বময় বাংলাভাষা" কাব্যগ্রন্হ থেকে নেওয়া
ছবি: যে কালে ময়না পালে
বুলি শিখে কথা বলে

কিশোর বাবুর খুশি মেলে

যে কালে ময়না পালে

পাড়া গাঁয়ে সাড়া ফেলে।

বাম হাতে ঘুড়ি নিয়ে

ডান হাতে খাঁচা ধরে

কিশোর বাবু কথা বলে

ছুটে যায় দিঘীর পাড়ে।

খানিক পরে ঘুড়ি উড়ে

গগণ পানে ছো ছো করে

যায় ছুটে যায় রশি ছুটে

কিশোর বাবু খাঁচা ফেলে

দৌড়ে যায় নদীর ঘাটে।

প্রিয় সাথী সোহাগ এসে

খাঁচা দেখে হেসে ফেলে

খুশির ছটে ময়না নিয়ে

সোহাগ করে বুলি বলে ।

সারা বিকাল কেঁদে - কেঁদে

কিশোর বাবু অর্ধ - মরা

বাবা - মায়ের বকা খেয়ে

মনের জ্বালায় সুখে খরা।

সন্ধ্যা হলে সোহাগ আসে

দুই হাতে খাঁচা নিয়ে,

ফিরিয়ে দেয় বুলি পাখি

প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় দিয়ে।

যে কালে ময়না পালে

ভুলে কি কেউ কস্মিন কালে?

বারংবার চায় ফিরে যেতে

অপূর্ব স্বাদে পঞ্জিকা সালে।

এ কবিতাটির আবৃত্তির লিঙ্ক:




Saturday, 28 September 2019

শিশু পার্কে যাই

ছবি: শিশু পার্কে যাই
ভাইরে ভাইরে ভাই,
শিশু পার্কে যাই।
দলে দলে দোলনা চড়ে
কত মজা পাই!
খেলনা দিয়ে খেলার মাঝে
হঠাৎ ফুটে নাই।
মনে প্রাণে চাই
ওটা ফিরে পাই।

কাড়ি কাড়ি বেলুন দেখি
সারা পার্ক জুড়ে,
লাল বেলুন নীল বেলুন
রংধনুর সাজে-
ওড়ে যায় আকাশ পানে
সারি সারি ভাঁজে।

আমিও চাই ওড়ে যাই
বেলুনের সাথে,
ধরে ফেলি রংধনু
উল্লাসে মেতে।





শিশু পার্কে যাই ' ছড়াটির আবৃত্তির ইউটিউব লিঙ্ক: https://youtu.be/NBYGtI8LNVY


Friday, 27 September 2019

একুশের কবিতা


ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখদুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?


পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।

Thursday, 8 February 2018

আমাদের দেশ

          আ.ন.ম বজলুর রশীদ
আমাদের দেশ তারে কত ভালবাসি
সবুজ ঘাসের বুকে শেফালির হাসি,
মাঠে মাঠে চরে গরু নদী বয়ে যায়
জেলে ভাই ধরে মাছ মেঘের ছায়ায়।
রাখাল বাজায় বাঁশি কেটে যায় বেলা
চাষা ভাই করে চাষ কাজে নেই হেলা।
সোনার ফসল ফলে ক্ষেত ভরা ধান
সকলের মুখে হাসি, গান আর গান।

Friday, 20 October 2017

নক্সী কাঁথার মাঠ - দশ

নক্সী কাঁথার মাঠ - দশ


নতুন চাষা ও নতুন চাষাণী পাতিল নতুন ঘর, বাবুই পাখিরা নীড় বাঁধে যথা তালের গাছের পর | মাঠের কাজেতে ব্যস্ত রূপাই, নয়া বউ গেহ কাজে, দুইখান হতে দুটি সুর যেন এ উহারে ডেকে বাজে | ঘর চেয়ে থাকে কেন মাঠ পানে, মাঠ কেন ঘর পানে, দুইখানে রহি দুইজন আজি বুঝিছে ইহার মানে | আশ্বিন গেল, কার্তিক মাসে পাকিল খেতের ধান, সারা মাঠ ভরি গাহিতেছে কে যেন হল্ দি-কোটার গান | ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়, কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায় | আজো এই গাঁও অঝোরে চাহিয়া ওই গাঁওটির পানে, মাঝে মাঠখানি চাদর বিছায়ে হলুদ বরণ ধানে | আজকে রূপার বড় কাজ---কাজ---কোন অবসর নাই, মাঠে যেই ধান ধরেনাক আজি ঘরে দেবে তারে ঠাঁই | সারা মাঠে ধান, পথে ঘাটে ধান উঠানেতে ছড়াছড়ি, সারা গাঁও ভরি চলেছে কে কবি ধানের কাব্য পড়ি | আজকে রূপার মনে পড়েনাক শাপলার লতা দিয়ে, নয়া গৃহিনীর খোঁপা বেঁধে দিত চুলগুলি তার নিয়ে | সিঁদুর লইয়া মান হয়নাক বাজে না বাঁশের বাঁশী, শুধু কাজ---কাজ, কি যাদু-মন্ত্র ধানেরা পড়িছে আসি | সারাটি বরষা কে কবি বসিয়া বেঁধেছে ধানের গান, কত সুদীর্ঘ দিবস রজনী করিয়া সে অবসান | আজকে তাহার মাঠের কাব্য হইয়াছে বুঝি সারা, ছুটে গেঁয়ো পাখি ফিঙে বুলবুল তারি গানে হয়ে হারা | কৃষাণীর গায়ে গহনা পরায় নতুন ধানের কুটো ; এত কাজ তবু হাসি ধরেনাক, মুখে ফুল ফুটো ফুটো! আজকে তাহার পাড়া-বেড়ানর অবসর মোটে নাই, পার খাড়ুগাছি কোথা পড়ে আছে, কেবা খোঁজ রাখে ছাই! অর্ধেক রাত উঠোনেতে হয় ধানের মলন মলা, বনের পশুরা মানুষের কাজে মিশায় গলায় গলা | দাবায় শুইয়া কৃষাণ ঘুমায়, কৃষাণীর কাজ ভারি, ঢেকির পারেতে মুখর করিছে একেলা সারাটি বাড়ি | কোন দিন চাষী শুইয়া শুইয়া গাহে বিরহের গান, কৃষাণের নারী ঘুমাইয়া পড়ে, ঝাড়িতে ঝাড়িতে ধান | হেমন্ত চাঁদ অর্ধেক হেলি জ্যোত্স্নার জাল পাতি, টেনে টেনে তারে হয়রান হয়ে ডুবে যায় রাতারাতি | এমনি করিয়া ধানের কাব্য হইয়া আসিল সারা, গানের কাব্য আরম্ভ হল সারাটা কৃষাণ পাড়া! রাতেরে উহারা মানিবে না যেন, নতুন গলার গানে, বাঁশী বাজাইয়া আজকে রাতের করিবে নতুন মানে | আজিকে রূপার কোন কাজ নাই, ঘুম হতে যেন জাগি, শিয়রে দেখিছে রাজার কুমারী তাহারই ব্যথার ভাগী | সাজুও দেখিছে কোথাকার যেন রাজার কুমার আজি, ঘুম হতে তারে সবে জাগায়েছে অরুণ-আলোয় সাজি | নতুন করিয়া আজকে উহারা চাহিছে এ ওর পানে, দীর্ঘ কাজের অবসর যেন কহিছে নতুন মানে! নতুন চাষার নতুন চাষাণী নতুন বেঁধেছে ঘর, সোহাগে আদরে দুটি প্রাণ যেন করিতেছে নড়নড়! বাঁশের বাঁশীতে ঘুণ ধরেছিল, এতদিন পরে আজ, তেলে জলে আর আদরে তাহার হইল নতুন সাজ | সন্ধ্যার পরে দাবায় বসিয়া রূপাই বাজায় বাঁশী, মহাশূণ্যের পথে সে ভাসায় শূণ্যের সুররাশি! ক্রমে রাত বাড়ে, বউ বসে দূরে, দুটি চোখ ঘুমে ভার, "পায়ে পড়ি ওগো চলো শুতে যাই, ভাল লাগে নাক আর |" রূপা ত সে কথা শোনেই নি যেন, বাঁশী বাজে সুরে সুরে, "ঘরে দেখে যারে সেই যেন আজি ফেরে ওই দূরে দূরে |" বউ রাগ করে, "দেখ, বলে রাখি, ভাল হবেনাক পরে, কালকের মত কর যদি তবে দেখিও মজাটি করে | ওমনি করিয়া সারারাত আজি বাজাইবে যদি বাঁশী, সিঁদুর আজিকে পরিব না ভালে, কাজল হইবে বাসি | দেখ, কথা শোন, নইলে এখনি খুলিব কানের দুল, আজকে ত আমি খোঁপা বাঁধিব না, আলগা রহিবে চুল |" বেচারী রূপাই বাঁশী বাজাইতে এমনি অত্যাচার, কৃষাণের ছেলে! অত কিবা বোঝে, তখনই মানিল হার | কহে জোড় করে, "শোন গো হুজুর, অধম বাঁশীর প্রতি, মৌন থাকার কঠোর দণ্ড অন্যায় এ যে অতি | আজকে ও-ভালে সিঁদুর দিবে না, খুলিবে কানের দুল, সন্ধ্যে হবে না সিঁদুরে রঙের---ভোরে হাসিবে না ফুল! এক বড় কথা! আচ্ছা দেখাই, ওরে ও অধম বাঁশী, এই তরুণীর অধরের গানে তোমার হইবে ফাঁসী!" হাতে লয়ে বাঁশী বাজাইল রূপা মাঠের চিকন সুরে, কভু দোলাইয়া বউটির ঠোঁটে কভু তারে ঘুরে ঘুরে | বউটি যেন গো হেসে হয়রান, কহে ঠোঁটে ঠোঁট চাপি, "বাঁশীর দণ্ড হইল, কিন্তু যে বাজাল সে পাপী?" পুনঃ জোর করে রূপা কহে, "এই অধমের অপরাধ, ভয়ানক যদি, দণ্ড তাহার কিছু কম নিতে সাধ!" রূপার বলার এমনি ভঙ্গী বউ হেসে কুটি কুটি, কখনও পড়িছে মাটিতে ঢলিয়া, কভু গায়ে পড়ে লুটি | পরে কহে, "দেখো, আরও কাছে এসো, বাঁশীটি লও তো হাতে, এমনি করিয়া দোলাও ত দেখি নোলক দোলার সাথে!" বাঁশী বাজে আর নোলক যে দোলে, বউ কহে আর বার, "আচ্ছা আমার বাহুটি নাকিগো সোনালী লতার হার? এই ঘুরালেম, বাজাও ত দেখি এরি মত কোন সুর," তেমনি বাহুর পরশের মত বাজে বাঁশী সুমধুর! দুটি করে রাঙা ঠোঁটখানি টেনে কহে বউ, "এরি মত, তোমার বাঁশীতে সুর যদি থাকে বাজাইলে বেশ হত |" চলে মেঠো বাঁশী দুটি ঠোঁট ছুঁয়ে কলমী ফুলের বুকে, ছোট চুমু রাখি চলে যেন বাঁশী, চলে সে যে কোন লোকে | এমনি করিয়া রাত কেটে যায় ; হাসে রবি ধীরি ধীরি, বেড়ার ফাঁকেতে উঁকি মেরে দেখি দুটি খেয়ালীর ছিরি | সেদিন রাত্রে বাঁশী শুনে শুনে বউটি ঘুমায়ে পড়ে, তারি রাঙা মুখে বাঁশী-সুরে রূপা বাঁকা চাঁদ এনে ধরে | তারপরে খুলে চুলের বেণীটি বার বার করে দেখে, বাহুখানি দেখে নাড়িয়া নাড়িয়া বুকের কাছেতে রেখে | কুসুম-ফুলেতে রাঙা পাও দুটি দেখে আরো রাঙা করি, মৃদু তালে তালে নিঃশ্বাস লয়, শুনে মুখে মুখ ধরি | ভাবে রূপা, ও-যে দেহ ভরি যেন এনেছে ভোরের ফুল, রোদ উঠিলেই শুকাইয়া যাবে, শুধু নিমিষের ভুল! হায় রূপা, তুই চোখের কাজলে আঁকিলি মোহন ছবি, এতটুকু ব্যথা না লাগিতে যেরে ধুয়ে যাবে তোর সবি! ওই বাহু আর ওই তনু-লতা ভাসিছে সোঁতের ফুল, সোঁতে সোঁতে ও যে ভাসিয়া যাইবে ভাঙিয়া রূপার কূল! বাঁশী লয়ে রূপা বাজাতে বসিল বড় ব্যথা তার মনে, উদাসীয়া সুর মাথা কুটে মরে তাহার ব্যথার সনে | ধারায় ধারায় জল ছুটে যায় রূপার দুচোখ বেয়ে, বইটি তখন জাগিয়া উঠিল তাহার পরশ পেয়ে | "ওমা ওকি? তুমি এখনো শোওনি! খোলা কেন মোর চুল? একি! দুই পায়ে কে দেছে ঘষিয়া রঙিন কুসুম ফুল? ওকি! ওকি!! তুমি কাঁদছিলে বুঝি! কেন কাঁদছিলে বল?" বলিতে বলিতে বউটির চোখ জলে করে ছল ছল! বাহুখানা তার কাঁধ পরে রাখি রূপা কয় মৃদু সুরে, "শোন শোন সই, কে যেন তোমায় নিয়ে যেতে চায় দূরে!" "সে দূর কোথায়?" "অনেক---অনেক---দেশ যেতে হয় ছেড়ে, সেথা কেউ নাই শুধু আমি তুমি আর সেই সে অচেনা ফেরে | তুমি ঘুমাইলে সে এসে আমায় কয়ে যায় কানে কানে, যাই---যাই---ওরে নিয়ে যাই আমি আমার দেশের পানে | বল, তুমি সেথা কখনও যাবে না, সত্যি করিয়া বল!" "নয়! নয়! নয়!" বউ কহে তার চোখ দুটি ছল ছল | রূপা কয় "শোন সোনার বরণি, আমার এ কুঁড়ে ঘর, তোমার রূপের উপহাস শুধু করে সারা দিনভর | তুমি ফুল! তব ফুলের গায়েতে বহে বিহানের বায়ু, আমি কাঁদি সই রোদ উঠিলে যে ফুরাবে রঙের আয়ু | আহা আহা সখি, তুমি যাহা কর, মোর মনে লয় তাই, তোমার ফুলের পরাণে কেবল দিয়া যায় বেদনাই |" এমন সময় বাহির হইতে বছির মামুর ডাকে, ধড়মড় করি উঠিয়া রূপাই চাহিল বেড়ার ফাঁকে |

Wednesday, 18 October 2017

তালগাছ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।
মনে সাধ,কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়,
একেবারে উড়ে যায়
কোথা পাবে পাখা সে ।
তাই তো সে ঠিক তার মাথাতে
গোল গোল পাতাতে
ইচ্ছাটি মেলে তার
মনে মনে ভাবে বুঝি ডানা এই,
উড়ে যেতে মানা নেই
বাসাখানি ফেলে তার ।
সারাদিন ঝরঝর থত্থর
কাঁপে পাতা পত্তর
ওড়ে যেন ভাবে ও,
মনে মনে আকাশেতে বেড়িয়ে
তারাদের এড়িয়ে
যেন কোথা যাবে ও।

Saturday, 30 September 2017

দুই বিঘা জমি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।
কহিলাম আমি, তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই।
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা-
ওটা দিতে হবে। কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, আচ্ছা, সে দেখা যাবে।
(৭৯)
পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে-
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি –
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য!
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে বছর পনেরো-ষোল –
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হলো।
নমঃনমঃনমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধূলি
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ,
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল-নিশীথশীতল স্নেহ।
বুকভরা মধু বঙ্গের বধু জল লয়ে যায় ঘরে-
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে-
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি রথতলা করি বামে,
রাখি হাটখোলা, নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।
ধিক ধিক ওরে, শত ধিক তোরে, নিলাজ কুলটা ভূমি!
যখনি যাহার তখনি তাহার, এই কী জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফল ফুল শাক পাতা!
আজ কোন রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ-
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন-
(৮০)
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন।
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সেদিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি, ক্ষুধাহরা সুধারাশি!
যত হাসো আজ যত করো সাজ ছিলে দেবী, হলে দাসী।
বিদীর্ণহিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি-
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে, সেই আমগাছ, এ কি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক-কালের কথা।
সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা পলায়ন-
ভাবিলাম হায় আর কী কোথায় ফিরে পাব সে জীবন!
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা,
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।
হেনকালে হায় যমদূত প্রায় কোথা হতে এল মালী,
ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব-
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব!
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ সাথে ধরিতে ছিলেন মাছ।
শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, মারিয়া করিব খুন।
বাবু যত বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!
বাবু কহে হেসে বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়।
আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে-
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!